এতদিন পর কোয়ান্টাম মেকানিক্সের এক জটিল রহস্যের সমাধান হয়েছে। ভারতের বেঙ্গালুরু ও কলকাতা, এবং প্যারিসে বসবাসকারী সাত জন বিজ্ঞানী এই অসাধ্য সাধন করেছেন। বেঙ্গালুরুতে রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের লাইট অ্যান্ড ম্যাটার ফিজিক্স বিভাগের অধ্যাপিকা উর্বশী সিনহা, তাঁর তিন ছাত্র-ছাত্রী সূর্যনারায়ণ সাহু, সঞ্চারী চক্রবর্তী, সৌম্যরঞ্জন বেহেরা, কলকাতার বসু বিজ্ঞান মন্দিরের সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোপার্টিকল ফিজিক্স অ্যান্ড স্পেস সায়েন্সের অধ্যাপক দীপঙ্কর হোম, তাঁর ছাত্র সোম কাঞ্জিলাল, এবং প্যারিস বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরি দ্য ফিজিক থিওরিকের অধ্যাপক অ্যালেক্স মাতঝাকিন একসঙ্গে পরীক্ষার মাধ্যমে এই রহস্যের উন্মোচন করেছেন।
প্রায় এক শতাব্দী আগে কোয়ান্টাম মেকানিক্সের গুরু নিলস বোর বলেছিলেন, প্রতিটি কণার তরঙ্গধর্ম থাকে। আলো সম্পর্কে আইজাক নিউটন প্রায় ৩৫০ বছর আগে বিশ্বাস করতেন যে, আলো কণার সমষ্টি। তবে টমাস ইয়ং তাঁর পরীক্ষায় দেখিয়েছিলেন, আলো আসলে একটি তরঙ্গ। বোরের মতে, আলো কণা এবং তরঙ্গ দু’টোই। কিন্তু একটি ধর্ম দেখলে অন্যটি দেখা যায় না—এটাই কোয়ান্টামের মূল রহস্য।
এই রহস্যের সমাধানের জন্য বিজ্ঞানীরা এক দশক ধরে চেষ্টা চালাচ্ছিলেন। অবশেষে, বেঙ্গালুরুতে রমন রিসার্চ ইনস্টিটিউটে করা পরীক্ষায় তাঁরা দেখান, আলোর কণা ফোটন এবং তরঙ্গ একসঙ্গে দুইটি ধর্মেই থাকতে পারে। তাঁদের গবেষণাপত্রটি ‘কমিনিকেশনস ফিজিক্স’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে, যা ‘নেচার’ গ্রুপের একটি গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকা।
পরীক্ষায় ব্যবহৃত যন্ত্রটি ছিল একেবারে সাদামাটা—ইন্টারফেরোমিটার, যা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের বিভিন্ন পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয়। এই যন্ত্রের দুই শাখা রয়েছে—একটি শাখায় ফোটনের কণা-ধর্ম, আর অন্য শাখায় তরঙ্গধর্ম দেখা যায়।
উর্বশী সিনহা বলেছিলেন, ‘‘এ ধরনের পরীক্ষার কথা ২০১৩ সাল থেকে বিজ্ঞানী আকির আহরানভ বলে আসছিলেন, যাকে ‘কোয়ান্টাম চেশায়ার ক্যাট’ এফেক্ট বলা হয়। এটি লুই ক্যারলের ‘অ্যালিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’-এর আদলে তৈরি। অনেকেই এই প্রভাব দেখার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু আমরা প্রথম সফল হলাম।’’ অ্যালেক্স মাতঝাকিন বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে কোয়ান্টামের মৌলিক সমস্যাগুলি নিয়ে কাজ করার কথা ভাবছিলাম, এবং অবশেষে সফল হলাম।’’
অধ্যাপক দীপঙ্কর হোম তাঁর শিক্ষক শ্যামল সেনগুপ্তের কথা স্মরণ করে বলেছিলেন, ‘‘মাস্টারমশাই যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তবে খুশি হতেন। তিনি সব সময় মৌলিক সমস্যাগুলি নিয়ে কাজ করার পরামর্শ দিতেন। কোয়ান্টাম মেকানিক্স কম্পিউটারে বিপ্লব আনবে, কিন্তু মৌলিক সমস্যার উপর কাজ করাও গুরুত্বপূর্ণ।’’
এই অর্জন কোয়ান্টাম সেন্সিং এবং জরিপের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে, এবং এ থেকে অনেক নতুন বিষয় উদ্ভাবন হতে পারে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)