শনিবার, রাত ৮:১৫, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শনিবার, রাত ৮:১৫, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ওয়ালিদ দাক্কার মৃত্যু

ইসরায়েলে কারাগারে বন্দী অবস্থায় ফিলিস্তিনি লেখক ও মানবাধিকারকর্মী ওয়ালিদ দাক্কার মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃত্যুর পূর্বে তিনি ক্যানসারে ভুগছিলেন এবং ইসরায়েলের শামির মেডিকেল সেন্টারে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। প্যালেস্টিনিয়ান কমিশন অব ডিটেইনিস অ্যান্ড এক্স-ডিটেইনিস অ্যাফেয়ার্স তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে, আল জাজিরার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে।

দাক্কার বাড়ি ইসরায়েলের ফিলিস্তিন-অধ্যুষিত বাকা আল গারবিয়ে শহরে। ১৯৮৬ সালে ইসরায়েলি সৈন্যকে হত্যার অভিযোগে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং তার পর থেকে ৩৮ বছর ধরে ইসরায়েলি কারাগারে আটক ছিলেন। প্যালেস্টিনিয়ান কমিশনের দাবি, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ ‘ধীরে ধীরে হত্যা’ করার কৌশল অবলম্বন করে দাক্কাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। এই নীতি অনুযায়ী, বন্দীদের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদান না করার অভিযোগ রয়েছে।

ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা ওয়াফার তাকে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে উল্লেখ করেছে, অন্যদিকে হামাস ইসরায়েলি কারাগারে দাক্কা মৃত্যুর কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। ইসরায়েলের উগ্র ডানপন্থী মন্ত্রী ইতামার বেন গভির দাক্কাকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এবং বলেন, “দাক্কার মৃত্যুতে ইসরায়েলকে কোনো দুঃখ নেই।”

দাক্কা ছিলেন সবচেয়ে দীর্ঘ সময় ধরে ইসরায়েলি হেফাজতে থাকা এক বিশিষ্ট ফিলিস্তিনি বন্দী। কারাগারে থাকাকালে তিনি বেশ কিছু বই লিখেছেন, যার মধ্যে একটি শিশু-কথাও ছিল। ১৯৯৯ সালে কারাবন্দী অবস্থায় তিনি বিয়ে করেন, এবং ২০২০ সালে তাঁর স্ত্রী সানা সালামেহ একটি কন্যাসন্তান জন্ম দেন। দাক্কার শুক্রাণু গোপনে স্থানান্তরিত করার মাধ্যমে সন্তানটি পৃথিবীতে আসে, যার নাম মিলাদ।

২০২১ সালে দাক্কার শরীরে বিরল ধরনের হাড়ের মজ্জার ক্যানসার মাইলোফাইব্রোসিস ধরা পড়ে, এবং এরপর মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরায়েলকে তাঁর চিকিৎসা প্রদান করার জন্য চাপ দিতে থাকে। কিন্তু ইসরায়েল তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা এবং জরুরি অস্ত্রোপচার দিতে বিলম্ব করেছিল, এবং কারাগার থেকে তাকে মুক্তি দিতে অস্বীকার করে। ২০২৫ সালে তাঁর মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল।

গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ইসরায়েলি কারাগারে কমপক্ষে ১০ ফিলিস্তিনি বন্দীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে, যদিও হারেৎজ সংবাদপত্রের তদন্তে এই সংখ্যা ২৭ জন বলে জানানো হয়েছে। দাক্কার মৃত্যুতে রামাল্লায় অনেক ফিলিস্তিনি প্রতিবাদে নেমে এসেছেন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top