টাঙ্গাইলের মধুপুরে লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন বাধার মুখে স্থগিত করেছে লালন সংঘ। বুধবার রাত আটটায় মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে অনুষ্ঠানটি হওয়ার কথা ছিল, তবে দুপুরের পর থেকেই মাইকিংয়ের মাধ্যমে জানানো হয় যে অনুষ্ঠানটি অনিবার্য কারণে স্থগিত করা হয়েছে।
অনুষ্ঠান উদ্যাপন কমিটির আহ্বায়ক মো. সবুজ মিয়া ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন, হেফাজতে ইসলাম এবং ওলামা পরিষদ মধুপুর শাখার বাধার কারণে অনুষ্ঠানটি করা যাচ্ছে না।
সবুজ মিয়া জানিয়েছেন, লালন সংঘ ২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে মধুপুর বাসস্ট্যান্ডে দুইবার বড় আকারে লালন স্মরণোৎসব আয়োজন করেছে। এবার লালন স্মরণোৎসব ২০২৫ নামে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল, যাতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে প্রধান অতিথি করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানটির প্রস্তুতি শেষের পথে ছিল, কিন্তু হঠাৎ করে খবর আসে যে হেফাজতে ইসলাম অনুষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আপত্তি জানিয়েছে। এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি বিকেলে হেফাজতের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে মধুপুরের হেফাজতের সভাপতি মুফতি আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মাহমুদুল্লাহ এবং কওমি ওলামা পরিষদের সভাপতি মাওলানা সোলায়মান কাসেমীসহ ১০-১৫ জন নেতা উপস্থিত ছিলেন। লালন সংঘের পক্ষ থেকে সভাপতি ফরহাদ হোসেন তরফদার এবং সবুজ মিয়া উপস্থিত ছিলেন, এবং মধ্যস্থতার জন্য উপস্থিত ছিলেন মধুপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকির হোসেন সরকার।
ফরহাদ তরফদার ও সবুজ মিয়া জানিয়েছেন, ইসলামি দলের নেতারা তাঁদের জানিয়েছেন, লালনের মতাদর্শকে নাজায়েজ, কুফরি বা শিরক হিসেবে মনে করা হয়, এবং তারা মধুপুরে এর প্রচার হতে দিতে পারবেন না। যদিও আলোচনা হয়েছিল যে লালনের মতাদর্শ নিয়ে কোনও বিতর্ক করা হবে না, তবে তারা তাদের অবস্থান থেকে সরে আসেননি। শেষে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য অনুষ্ঠানটি স্থগিত করতে হয়।
হেফাজতে ইসলাম মধুপুর শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহমুদউল্লাহ বাধা দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন এবং বলেছেন, ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বিষয় হওয়ায় অনুষ্ঠানটি আয়োজন করতে নিষেধ করা হয়েছে। কওমি ওলামা পরিষদ মধুপুর শাখার সভাপতি সোলায়মান কাসেমীর সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, কারণ তাঁর ফোন নম্বর বন্ধ ছিল।
মধুপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমরানুল কবির জানিয়েছেন, তিনি ছুটিতে ছিলেন এবং বিকেলে এসে শুনেছেন যে ইসলামি দলগুলো অনুষ্ঠানটি বন্ধ করেছে।
মধুপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর্জা জুবায়ের হোসেন জানিয়েছেন, দুই পক্ষের আলোচনার পর অনুষ্ঠানটি স্থগিত করা হয়েছে, তবে তিনি জানেন না কেউ বাধা দিয়েছে।