–
ওয়াহিদুজ্জামান বেড়া পাবনাঃ
পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় সেচখালগুলোতে পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে গত ১৫ জানুয়ারি। তবে ক্রটিপূর্ণ সেচ ব্যবস্থার কারণে কমান্ড এরিয়ার ৭০ থেকে ৮০ ভাগ জমিতে সেচ সুবিধা প্রদান করতে পারছেন না পানি উন্নয়ন বিভাগ।ফলে চাষিরা কম খরচের সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেক বোরো চাষি জানিয়েছে বিকল্প হিসেবে কমান্ড এরিয়ায় গভীর অগভীর নলকূপ বসিয়ে তাদের জমিতে সেচের মাধ্যমে ধান চাষ করতে হচ্ছে ।এতে করে উৎপাদন খরচ বেড়ে গিয়ে আর্থিক ক্ষতির আশংকা করছেন তারা।
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে পাবনা সেচ ও পল্লীউন্নয়ন প্রকল্পের পরিকল্পনা গ্রহন করে ১৮ হাজার ৬৬১ হেক্টর জমি সেচের আওতায় নিয়ে প্রকল্প গ্রহন করা হয়।এবং বছরে ১ লাখ ৯১ হাজার টন অতিরিক্ত ফসল উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়। সেই সাথে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে দুটি পাম্পিং ষ্টেশন, ৪২ কিলোমিটার প্রধান সেচ (পানি সংরক্ষণাগার) খাল, ১৯টি সেকেন্ডারী খাল, ৪৭টি টারশিয়ারী খালও চার শতাধিক মাইনর খাল নির্মাণ করা হয়।
১৯৯২ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করা হয় পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্প।
তবে শুরু থেকেই প্রকল্পের কমান্ড এরিয়ায় কোন বছর ৩ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা দিতে না পারলেও প্রতিবছরই ঢাকঢোল পিটিয়ে লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে সেচ মৌসুম শুরু করেন সেচ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ। গত মৌসুমে ৩ হাজার ১২৫ হেক্টর জমি লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে সেচ কার্ক্রম শুরু করলেও আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে সেচের পানি সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছিল বলে সংশ্লিষ্টদের দাবি। চলতি বোরো মৌসুমে গত ১৫ জানুয়ারি কৃষক সমাবেশর মধ্যে দিয়ে ৩ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিতে সেচ সরবরাহ করা হবে ঘোষনা দিলেও চাষিরা আশংকা করছেন এবার ২ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ কর্তৃপক্ষ পানি সরবরাহ করতে পারবে কিনা সন্দেহ রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ক্রুটিপুর্ণ সেচ ব্যবস্থার কারণে প্রতিবছর সেচের আওতা বৃদ্ধি না হয় বরং সংকুচিত হচ্ছে পাবনা সেচ প্রকল্প। কৃষকদের অভিযোগ সেচ ক্যানেল নির্মানের সময় সঠিক ভাবে মাটি কম্প্যাক্ট করা হয়নি। এছাড়া জমির লেবেল থেকে ক্যানেলের বেডলেবেল অনেক নিচু হওয়ায় পানি ওভারফ্লো করতে গেলে অনেক জায়গায় পানির চাপে ডাইক বাঁধ ভেঙ্গে যায় । এমন ভাবে বেড়া উপজেলার মোহনগঞ্জ, কৈতলা, নতুন পেঁচাকোলা হরিরামপুর,মাছখালি, সাঁথিয়া উপজেলার বায়া, ছেচানিয়া,বড়গ্রাম, পানশাইল,গাগড়াখালি,, বোয়ালমারি সহ বেশ কিছু জায়গায় বাঁধ ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশে থাকায় কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে সে সকল সেচ ক্যানেল। আর এ সুযোগে অনেকে ক্যানেল ভরাট করে সেখানে দোকানপাট ও বসতি গড়ে তুলেছেন স্থানীয়রা।
পাউবোর একটি নির্ভর সুত্রে জানা গেছে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সরকারি বরাদ্দকৃত এডিবির ৩০০ কোটি টাকার কাজ নামমাত্র করে এপেনডিক্স-৪ ও ৫ এর মাধ্যমে শিংহভাগ টাকা আত্মাসাত করেছে একটি চক্র ।ফলে গত ৩৩ বছরে প্রকল্প কমান্ড এরিয়ায় সেচ লক্ষ্যমাত্রা ১৮ হাজার ৬৮০ হেক্টরের মধ্যে প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া সম্ভব হয়নি । কাগজ কলমে কাজ সম্পন্ন হওয়ায় প্রতিবছরই সেচ সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় আবাদের পরিমান কমে ২ হাজার ৫০০ হেক্টর দাঁড়িয়েছে। অথচ বেড়া পানি উন্নয়ন বিভাগ গত ৩৩ বছরে এ সেচ প্রকল্পের সফলতা কিংবা ব্যর্থতার কোন মূল্যায়ন প্রতিবেদন তৈরি করেননি।
এদিকে বাজারে ধানের ভালো মুল্য বিরাজ করায় পানি বঞ্চিত কৃষকেরা নিজ নিজ উদ্যোগে গভীর অগভীর সেচযন্ত্র স্থাপন করে বোরো ধান চাষ অব্যাহত রেখেছেন । এতে প্রতিবিঘা জমিতে বোরো উৎপাদনে প্রায় চার হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ হবে বলে চাষিরা জানিয়েছেন।
সেচ- সমিতির সভাপতি কৃষক নেতা আনছার আলী জানান, সেচ পানি ব্যবহার করে চাষিরা বাৎসরিক ( তিনটি ফসল) বিঘাপ্রতি ১৮০ টাকা সার্ভিস চার্জ প্রদান করেন, ফলে তাদের ফসল উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়। অপরদিকে সেচ সুবিধা বঞ্চিত কৃষকদের শুধুমাত্র বোরো উৎপাদনে সেচ বাবদ চার হাজার টাকা খরচ করতে হচ্ছে। উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় চাষিরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
বেড়া পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, আধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন এই ইরিগেশন প্রজেক্টটি পুরোদমে চালু করার জন্য পরিকল্পিতভাবে সেচ ও নিস্কাশন ক্যানেলসহ অন্যান্য অবকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন ও সংস্কার সাধন করতে হবে। তবেই পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পে ফসল উৎপাদনের কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলে তিনি মনে করেন।
তারিখ ১৫/২ /২০২৫