শনিবার, সন্ধ্যা ৭:৪৯, ১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শনিবার, সন্ধ্যা ৭:৪৯, ১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রহস্য এই যে, সরকারের কে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন

বর্তমানে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে, এবং এর কার্যক্রমের প্রতি জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে, যার ফলে জনগণের আশা ও বিশ্বাসও অনেক বেড়েছে। কিন্তু বর্তমানে যে অবস্থান দাঁড়িয়ে রয়েছে সরকার, তাতে অনেকেই মনে করছেন যে সরকারের দায়িত্ব পালনে এক ধরনের অগ্রাধিকারহীনতা এবং আলস্য লক্ষ করা যাচ্ছে।

প্রথমত, সরকারের বিরুদ্ধে জনগণের একটি বড় অংশ যে অভিযোগ করছে, তা হলো—সরকার যে কাজগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত, সেগুলো থেকে তারা অনেকটাই সরে গেছে। বর্তমান পরিস্থিতি এমন যে, দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রে সরকারের কার্যক্রম একদমই দৃশ্যমান নয়। ভাঙচুর, হামলা এবং অন্যান্য সহিংসতার ঘটনাগুলোর ব্যাপারে সরকার যথাযথ পদক্ষেপ নেয়নি। উদাহরণস্বরূপ, শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি ধ্বংস করা এবং সারা দেশে নানা ধরনের ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু সরকারের কোন স্পষ্ট প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি। সরকারের কার্যক্রমের মধ্যে এই ধরনের অসংগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যা সরকারের কর্তৃত্ব ও দায়িত্বের মধ্যে ফারাক সৃষ্টি করছে।

আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, গণ-অভ্যুত্থান থেকে আসা সরকার যখন অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাজ করা উচিত ছিল, তখন তারা নানা ধরনের বিচ্ছিন্ন ও দুর্বল পদক্ষেপ নিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, সরকারি মন্ত্রণালয় এবং সেনাবাহিনী যে ভূমিকা পালন করার কথা ছিল, তা অনেক ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত ছিল। ভাঙচুরের ঘটনা শুরু হলে সরকারের পক্ষ থেকে তা দ্রুত প্রতিরোধ করার কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এমনকি যারা ভাঙচুরের আহ্বান জানিয়েছিল, তাদের মধ্যে বেশ কিছু জন সরকারি সংগঠনের অংশ হিসেবে পরিচিত। এর ফলে পুরো পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে।

যতই ঘটনাগুলো বাড়ছে, ততই সরকারের দায়িত্বহীনতা এবং নিষ্ক্রিয়তা আরও স্পষ্ট হচ্ছে। এর পরিণতিতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে এবং সরকার যে দায়িত্ব গ্রহণ করেছে তা সঠিকভাবে পালিত হচ্ছে না। ফলে দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি এবং অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা দেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক। গণ-অভ্যুত্থান যা শান্তি, ন্যায় ও সমতার জন্য হয়েছিল, বর্তমানে সরকারের পদক্ষেপে তার বিপরীত প্রতিফলিত হচ্ছে।

এছাড়া, সরকারের কর্তৃপক্ষের মধ্যে অযথা বিভ্রান্তি এবং বিবাদ চলছে, যা রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমের প্রতি জনগণের আস্থা কমিয়ে দিচ্ছে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব এবং অস্পষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের ভাষা এবং সিদ্ধান্তগুলো একে অপরের সাথে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ছে। এটি দেশের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য বড় একটি হুমকি সৃষ্টি করছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো—বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি বর্তমানে এক ধরনের সংকটের মধ্যে রয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকার যদি দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের আয়োজন করতে না পারে, তাহলে পুরো দেশের পরিস্থিতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে। কারণ, জনগণ যদি সরকারের কাছ থেকে কার্যকরী পদক্ষেপ দেখতে না পায়, তাহলে তাদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়বে এবং সেটা গণবিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্ম দেবে। জনগণ প্রধানত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন এবং একটি স্থিতিশীল সরকার চায়, যা তাদের ন্যায়বিচারের নিশ্চয়তা এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করতে সক্ষম হবে।

এখানে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উঠছে—গণ-অভ্যুত্থান যে উদ্দেশ্যে হয়েছিল, সেই উদ্দেশ্য এখন কতটুকু বাস্তবায়িত হচ্ছে? বিশেষত, যে আকাঙ্ক্ষা এবং বিশ্বাস দেশের মানুষ গণ-অভ্যুত্থানে রক্ষা করতে চেয়েছিল, বর্তমান সরকারের কার্যক্রম তা পূর্ণাঙ্গভাবে অর্জন করতে পারছে না। বৈষম্য এবং নিপীড়নমূলক রাজনীতির প্রবণতা, ভয়ভীতি দেখানো এবং সৃজনশীলতার উপর আক্রমণের ঘটনা দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করছে।

এখন, সরকারকে তার শাসনকাজে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সরকারের অবস্থান পরিষ্কার করা। সরকার কী চায় এবং জনগণের কাছে কী বার্তা পৌঁছাতে চায়, তা সঠিকভাবে জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকেও সরকারের কার্যক্রম সম্পর্কে মতামত এবং অভিযোগ থাকা স্বাভাবিক। এসব অভিযোগের সঠিক সমাধান না হলে, জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরি করা কঠিন হবে।

অন্যদিকে, যেসব সহিংসতা হচ্ছে, সেগুলোকে পর্যালোচনা করা এবং আসল কারণ চিহ্নিত করা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের দায়িত্ব হবে—এ ধরনের সহিংসতার পেছনে কারা রয়েছে এবং কেন তারা এই ধরনের কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে, তা জনগণের সামনে স্পষ্টভাবে তুলে ধরা। বিদেশি এবং দেশি অশুভ শক্তির হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে এই সহিংসতা, তাই সরকারের উচিত তাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া।

এ ছাড়া, সরকারের পক্ষ থেকে যে ধরনের ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে, যেমন—যৌথ বাহিনীর অপারেশন এবং বিচারবহির্ভূত কার্যক্রম, সেগুলো দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সরকারের উচিত এসব ভুল পদক্ষেপ থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসা এবং দেশের জনগণের জন্য একটি নিরাপদ এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করা।

অবশেষে, সরকারের দায়িত্বশীলতা এবং সঠিক পদক্ষেপের মাধ্যমে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব। সরকারের উচিত দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজন করা, যাতে দেশের জনগণ তাদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

Scroll to Top