সিরাজগন্জ থেকে আব্দুস ছালাম শেখ
২০০৮ সালে সংসদীয় সীমানা পুনর্বিন্যাসের ফলে বিলুপ্ত হয় সিরাজগঞ্জ-৬ (চৌহালী-শাহজাদপুর একাংশ) আসন। এর পর থেকে চৌহালী উপজেলা এবং শাহজাদপুর উপজেলার চারটি চরাঞ্চলীয় ইউনিয়ন উন্নয়নের মূল ধারার বাইরে চলে গেছে এবং এই এলাকার বাসিন্দারা অবহেলার শিকার। স্থানীয়দের মতে, সীমানা পরিবর্তনের ফলে প্রশাসনিক সীমা পরিবর্তিত হলেও জনগণের মৌলিক অধিকার খর্ব হয়েছে, যার ফলে এখানকার উন্নয়ন কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে এবং জনগণ কার্যকর রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
চৌহালী একসময় আলাদা সংসদীয় আসন ছিল এবং সরাসরি সরকারি বাজেট বরাদ্দ ও উন্নয়ন প্রকল্পের সুবিধা পেত। কিন্তু ২০০৮ সালে সীমানা পুনর্বিন্যাসের পর চৌহালী বেলকুচি আসনের সঙ্গে যুক্ত হয়। এর ফলে বেলকুচি উপজেলায় উন্নয়নের ধারা বজায় থাকলেও চৌহালী উপজেলায় তেমন কোনো উন্নয়ন হয়নি।
স্থানীয়দের অভিযোগ, গত ১৭ বছরে তিনজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেও চৌহালীতে কোনো উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়নি। বরং এই সময়ে যমুনার অব্যাহত ভাঙনে চৌহালী এলাকার অনেক অংশ নদীগর্ভে চলে গেছে। অপরিকল্পিত নদীশাসন, দুর্বল অবকাঠামো এবং প্রশাসনিক অবহেলার কারণে জনগণ প্রতিনিয়ত দুর্ভোগে পড়ছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগের অবস্থা বেহাল হওয়ায় জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে।
এ অবস্থায়, সিরাজগঞ্জ-৬ (চৌহালী-শাহজাদপুর একাংশ) আসন পুনর্বহালের দাবি দিন দিন আরও জোরালো হয়ে উঠেছে। সম্প্রতি, চৌহালী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আব্দুল্লাহ আল মামুন নির্বাচন কমিশনে আনুষ্ঠানিক আবেদন জমা দিয়েছেন, যাতে সিরাজগঞ্জ-৬ আসন পুনর্বহালের বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, “একটি প্রশাসনিক সীমানা বিলুপ্ত হওয়া মানে শুধু একটি এলাকা হারানো নয়, বরং জনগণও উন্নয়ন থেকে বঞ্চিত হয়। চৌহালী এক সময় স্বতন্ত্র আসন হিসেবে সরাসরি সরকারি বরাদ্দ পেত, কিন্তু গত ১৭ বছরে আমরা তেমন কোনো উন্নয়ন সুবিধা পাইনি। নদীভাঙনের ফলে বিশাল এলাকা যমুনার গর্ভে চলে গেছে, অথচ কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমরা যে পিছিয়ে পড়েছি, তার মূল কারণ রাজনৈতিক প্রতিনিধিত্বের অভাব। তাই উন্নয়ন এবং জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে আমরা সিরাজগঞ্জ-৬ আসন পুনর্বহালের দাবি জানাচ্ছি।”
বর্তমানে এই দাবি নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা চলছে। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, জনপ্রতিনিধি এবং ভুক্তভোগী জনগণ একত্রিত হয়ে সরকার এবং নির্বাচন কমিশনের কাছে সিরাজগঞ্জ-৬ (চৌহালী-শাহজাদপুর একাংশ) আসন পুনর্বহালের আবেদন জানাচ্ছেন। তাদের মতে, এই আসন পুনর্বহাল হলে চৌহালী ও চরাঞ্চলীয় এলাকার জনগণ তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাবে এবং উন্নয়নের পথ খুলে যাবে। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, সিরাজগঞ্জ-৬ আসন পুনর্বহাল করা শুধু একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়, এটি ওই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের প্রশ্ন।