শনিবার, সকাল ১১:৩৩, ১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শনিবার, সকাল ১১:৩৩, ১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিশ্বনেতাদের সমাবেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ

সম্প্রতি ফ্রান্সের গ্র্যান্ড প্যালেসে অনুষ্ঠিত হলো তৃতীয় এআই অ্যাকশন সামিট, যেখানে আলোচনার মূল বিষয় ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য আন্তর্জাতিক নীতিমালা গঠন। এই সামিটে ১০০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা, প্রযুক্তিবিদ, রাজনৈতিক নেতা, এবং ব্যবসায়ী নেতারা একত্রিত হয়েছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এই চুক্তি সই করতে অস্বীকার করেছে, যা বিশ্বের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নীতিমালা সংক্রান্ত আলোচনা জটিল করে তুলেছে।

সামিটের উদ্দেশ্য:

এই সামিটের লক্ষ্য ছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা এবং একটি সুসংহত নীতি প্রণয়ন করা যা এআইয়ের নিরাপত্তা, ব্যবহার, এবং উন্নয়নের দিকটি নিয়ন্ত্রণ করবে। আলোচনার মূল বিষয় ছিল, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিভাবে বিশ্বের বিভিন্ন অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ এই সম্মেলনে সতর্ক করে বলেন, “এআইয়ের প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ইউরোপ পিছিয়ে পড়েছে।”

৬টি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি:

সামিটের পর ৬০টি দেশ একটি ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে তারা বিশ্বব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিরাপদ, সুষম এবং নৈতিক ব্যবহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। চুক্তির মূল দিকগুলো ছিল:

  1. সর্বজনীন এআই: এমন এআই প্রযুক্তি তৈরি করা, যা সবাই ব্যবহার করতে পারে।
  2. উন্নতি ও উদ্ভাবন: এআই প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনের জন্য সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টি।
  3. ভবিষ্যতের কর্মসংস্থান: এআই প্রযুক্তি ভবিষ্যতে কর্মসংস্থান এবং টেকসই উন্নয়ন সৃষ্টি করবে।
  4. টেকসই এআই: এআই প্রযুক্তি মানুষের এবং পৃথিবীর জন্য টেকসই হতে হবে।
  5. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: আন্তর্জাতিক আইন ও নীতিমালার মধ্যে সমন্বয় সাধন।

বিশ্বনেতাদের উপস্থিতি:

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট সামিটের উদ্বোধন করেন এবং এআই প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের জন্য শক্তিশালী নীতিমালা গড়ে তোলার কথা বলেন। ইউরোপীয় কমিশনের ডিজিটাল প্রধান হেনা ভার্ক্কুনেনও সামিটে উপস্থিত ছিলেন এবং ইউরোপে এআইয়ের জন্য বিধি প্রণয়নের কথা উল্লেখ করেন। এই সামিটে গুগল, মাইক্রোসফট ও সেলসফোর্সের মতো শীর্ষস্থানীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর সিইওরাও অংশ নিয়েছিলেন।

বিশ্বের সম্মিলিত উদ্যোগ:

এআই প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং সঠিক ব্যবহারের জন্য একটি নতুন আন্তর্জাতিক উদ্যোগের সূচনা হয়, যার নাম “কারেন্ট এআই”। এই উদ্যোগে ফ্রান্স, জার্মানি, গুগল এবং সেলসফোর্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নিয়েছে, এবং ২৫০ কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের বিরোধ:

এই সামিটের ফলস্বরূপ একটি যৌথ ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করা হলেও, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এতে সই করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স এআই খাতে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে সতর্ক করেছেন, আর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার চুক্তিটিকে জাতীয় নিরাপত্তা এবং গ্লোবাল গভর্ন্যান্সের প্রশ্নগুলোতে যথাযথ সমাধান না দেওয়ার কারণে সই করেননি।

এই তৃতীয় প্যারিস এআই অ্যাকশন সামিট কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিরাপদ এবং নৈতিক ব্যবহারের দিকে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে উৎসাহিত করেছে, যা ভবিষ্যতে বিশ্বের সকল মানুষের কল্যাণে কাজে আসবে।

সূত্র: আল জাজিরা ও দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top