জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের আমির শফিকুর রহমান বলেছেন, “ইতিহাসের নামে আমরা আর কোনো গল্প দেখতে চাই না। ইতিহাসটা স্বাভাবিকভাবে উঠে আসুক।”
তিনি তার বক্তব্যে আরও বলেন, “ইতিহাসে যার যেখানে স্থান রয়েছে, সেটি সঠিকভাবে তুলে ধরা উচিত। সেটা আপনাকে ভালো লাগুক বা না লাগুক, তা ইতিহাসই হবে। যদি আপনি শুধুমাত্র ভালো লাগার মানুষদের সামনে আনেন এবং যারা আপনার ভালো লাগবে না, তাদের বাদ দেন, তাহলে সেটি ইতিহাস নয়, কেবল একটি গল্প হবে।”
শফিকুর রহমান আজ শুক্রবার ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আয়োজিত মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে একটি আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন।
তিনি ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করে বলেন, “তারা ইতিহাস রচনা করেছেন। নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তাদের অনেকের মা আর জীবিত নেই, পরিবারের সদস্যরা কষ্টে আছেন। আমাদের রাষ্ট্রের কি এত অভাব যে তাদের প্রতি সুদৃষ্টি দেয়া যায় না?”
তিনি আরও বলেন, “আমরা লজ্জিত, কারণ আমরা রাজনীতি করি, কিন্তু আমাদের দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করি না। রাষ্ট্রের দায়িত্ব জনগণের হাতে না থাকলেও, সরকার চালাচ্ছে। যারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের দায়িত্বে ছিলেন, তাদের অবহেলা, উপেক্ষা এবং অপরাজনীতি এর দায় নিতে হবে।”
বর্তমান সরকারকে “জন–আকাঙ্ক্ষার সরকার” হিসেবে উল্লেখ করে শফিকুর রহমান অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আবেদন জানান, “তারা যতদিন আছেন, অনুরোধ করছি, ইতিহাসের এই অচলায়তন ভেঙে ফেলুন এবং ভাষাশহীদদের পরিবারের সম্মান রক্ষা করুন।”
তিনি বলেন, “বিগত সরকার এই জাতির প্রায় সকল নাগরিকের ওপর জুলুম করেছে, তবে জামায়াতে ইসলামীও এর বাইরে ছিল না। পরবর্তীতে সবার ওপর এই অত্যাচার চলে এসেছে, কেউ বাদ যায়নি। এখন, এই চ্যাপ্টারের পর, যদি আবার কারো ওপর জুলুম করা হয়, তাহলে কি এই জাতি তা মেনে নেবে?”
শফিকুর রহমান জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে বিচারের নামে ক্যাঙারু কোর্ট বসানোর অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, “এটি বিচার নয়, এটি এক ধরনের জুডিশিয়াল মার্ডার। একে একে সবাইকে বিদায় করা হয়েছে। তবে একজন এখনও বেঁচে আছেন, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। এখন পর্যন্ত তাকে কেন বন্দী রাখা হচ্ছে?”
এ প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান আরও বলেন, “আমাদের কেউ বলেছে যে আমরা ধৈর্য ধরেছি, আরও একটু ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা রাষ্ট্রে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাই না, তবে কেউ যদি আমাদের সঙ্গে খেলেন, আমরা কারও দাবার ঘুঁটি হব না। যদি এ টি এম আজহারুল ইসলামকে মুক্তি না দেয়া হয়, আমরা স্বেচ্ছায় জেলে যাব।”
তিনি সমাজে চাঁদাবাজির কারণে দ্রব্যের দাম বাড়ানোর বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, “এটা আমাদের সমাজে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আলোচনাসভায় আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামী ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক আবদুল মান্নান এবং নায়েবে আমির হেলাল উদ্দীন। সভায় সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের নায়েবে আমির আবদুস সবুর ফকির। অনুষ্ঠানে ভাষার গান পরিবেশন করেন হাসান আল বান্না ও তাওহীদুল ইসলাম।