বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী’র আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “আমরা এই দেশে মেজরিটি-মাইনরিটি ধারণা মানি না।” তিনি আজ বুধবার দুপুরে পঞ্চগড় চিনিকল মাঠে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত এক জনসভায় লাখো মানুষের উপস্থিতিতে এ মন্তব্য করেন।
তিনি ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর মহালয়ার দিনে পঞ্চগড়ের করোতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে নৌকাডুবিতে নিহত সনাতন ধর্মালম্বী ভুপেন্দ্রনাথ ও রুপালী রানীর শিশু সন্তান দিপুর লেখাপড়ার দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানান।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “১৫ মাস জেল খাটার পর আমি প্রথম পঞ্চগড় সফর করি এবং ওই শিশুটির পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিই। তবে আমি দেখলাম যে, পরের দিন এলাকার তৎকালীন সংসদ সদস্য ও তার স্ত্রী গিয়েছিলেন এবং তারা বলেছিলেন যে তারা এই শিশুটির দায়িত্ব নেবেন। এতে আমি খুশি হয়েছি, তবে পরবর্তীতে জানতে পারি, তারা ওই শিশুর প্রতি কোনো মনোযোগ দেয়নি, শুধু কাপড় চোপড় দিয়েছে। কিন্তু তার লেখাপড়া এবং দৈনন্দিন খরচের দায়িত্ব কে নেবে? আমরা তাকে কোলেপিঠে নেওয়ার সুযোগ পেয়েছি, এবং যতদিন সে প্রাপ্তবয়স্ক না হবে, তার সব দায়িত্ব আমাদের। আমরা প্রতি মাসের ১ তারিখে তার বাড়িতে পৌঁছে যাবো।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা এই দেশে মেজরিটি-মাইনরিটি মানি না। আমরা মানবতাকে টুকরো টুকরো দেখতে চাই না। সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগরিষ্ঠ বলে বিভক্ত হতে চাই না। যেই দেশে জন্ম নিয়েছে, সেই ব্যক্তিই সেই দেশের গর্বিত নাগরিক।”
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “আমরা নাগরিকদের ধর্ম বা দলের ভিত্তিতে ভাগ করতে চাই না। অতীতে পতিত স্বৈরাচারের আমলে এই জাতিকে টুকরো টুকরো করে বিভক্ত করা হয়েছিল। যে দেশের জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারে না, সে দেশের মানুষ সম্মানের সাথে মাথা সোজা করে দাঁড়াতে পারে না। স্বাধীনতার ৫৪ বছর পেরিয়ে গেছে, আরও কত বছর আমাদেরকে এভাবে বিভক্ত রাখা হবে?”
তিনি বলেন, “আমরা আমাদের প্রতিবেশিকে কষ্ট দিতে চাই না, তবে প্রতিবেশীরা যেন আমাদের উপর এমন কিছু চাপিয়ে না দেন যা বাংলাদেশের মানুষের জন্য অসম্মানজনক। যদি এমন কিছু তারা করেন, তবে দেশের স্বার্থে আমাদের ভূমিকা রাখতে আমরা কারও চোখের দিকে তাকাবো না।”
এসময় তিনি আরও বলেন, “আমরা বাংলাদেশকে একটি মানবিক দেশ হিসেবে দেখতে চাই। আমরা বাংলাদেশকে আর গডফাদারের দেশ, গডমাদারের দেশ, মাফিয়াতন্ত্রের দেশ বা ফ্যাসিবাদের দেশ হিসেবে দেখতে চাই না।”
জনসভায় জেলা জামায়াতে ইসলামী’র আমির ইকবাল হোসাইন সভাপতিত্ব করেন। আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী’র কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাধারণ সম্পাদক আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি তাসমিয়া প্রধান, জেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি মীর মুরসেদ তুহিন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক ফজলে রাব্বি প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জেলা জামায়াতে ইসলামী’র সেক্রেটারী জেনারেল অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন।