ছবি ক্যাপশন বেড়া চতুর হাটে কাঁচামরিচ কমমূল্যে ক্রয় করে মজুদ করছে ফরিয়া ব্যাপারী
ওয়াহিদুজ্জামান ঃ
দেশের মধ্যে অন্যতম পেঁয়াজ ও সব্জি উৎপাদনকারী অঞ্চল হিসেবে খ্যাত পাবনা জেলার বেড়া সাঁথিয়া সুজানগরের কৃষকেরা মুড়িকাটা পেঁয়াজ কাঁচা মরিচসহ সব্জি চাষে ব্যাপক লোকসানের মধ্যে পড়েছেন।এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করে তাদের ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা লোকসান ও সব্জি চাষের শ্রমিক ও পরিবহন খরচও উঠছে না বলে অভিযোগ করছেন। তারা জানান,শীতকালীন সব্জি আলু, বেগুন,ফুল কপি, পাতা কপি, টমেটো,গাজর, লাউ, কাঁচা মরিচ, মুলাসহ অধিকাংশ সব্জির ব্যাপক দরপতনে গ্রামীন অর্থনীতিতে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা।
বেড়া সাঁথিয়ার বিভিন্ন হাটবাজার ঘুরে ও প্রান্তিক কৃষদের সাথে আলাপ করে দেখা গেছে চাষিদের হতাশার চিত্র।
বেড়া উপজেলা বরশিলা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানান,তিনি একবিঘা জমিতে ৫ হাজার টাকা মন দরে পেঁয়াজ কিনে তিনি জমিচাষ করেছিলেন। বীজ সার ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে তার খরচ হয়েছিল ৭০ হাজার টাকার উপরে। এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ উৎপন্ন হয়েছে গড়ে ৪৫ মন।হাটবাজারে একমন পেঁয়াজ ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ শো টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।এতে গড়ে তার বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে।
কৃষকেরা অভিযোগ করেছেন পেঁয়াজের উৎপাদন ব্যয়, বাজারমূল্যের অস্থিরতা এবং মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্যই এই লোকসানের প্রধান কারণ। এসব কারণে পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ হারাতে বসেছে এ অঞ্চলের কৃষক । এছাড়া ক্রমাগত ভাবে পেঁয়াজের উৎপাদন বেড়েই চলেছে। অধিকাংশ কৃষক জানিয়েছেন, জমি প্রস্তুত, বীজ, সার, সেচ, কীটনাশক এবং শ্রমিক খরচ মিলে এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ চাষ করতে যা খরচ হয়েছে, তার অর্ধেক দামেও পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছেন না তারা।
বেড়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, বছর বেড়া উপজেলায় ১৯৮৮ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে। তারা স্বীকার করেছেন এ বছর ফলন অত্যন্ত ভালো, তাই বাজারে আমদানি বেড়ে যাওয়ায় দাম অনেকটা কমে গেছে।
বেড়া চতুর হাটে সব্জি বিক্রি করতে আসা
সাঁথিয়া উপজেলার চোমরপুর গ্রামের কৃষক আমিন উদ্দিন জানান, তিনি এক বিঘা জমিতে পাতা কপি ও মুলা চাষ করেছিলেন বর্তমান বাজারে এনে গড়ে তিন কেজি ওজনের পাতা কপি একশোটি চারশো টাকায় বিক্রি করতে পারছেন।এতে তার পরিবহন খরচই উঠছে না। এছাড়া চার বস্তা মুলা হাটে নিয়ে এসে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বিক্রির আশায় সেগুলো দামই জিজ্ঞেস করছে না ব্যাপারীরা। চোখ মুখে হতাশার ছাপ মেলে আক্ষেপ নিয়ে বললেন,আমাদের দেশের কৃষকদের ভাগ্যটাই এমন।এক বছর মুখে হাসি ফুটলে পরের বছরই কানতে হয়।
সরেজমিনে বেড়া বাজারে ঘুরে দেখা যায় খুচরা পর্যায়ে এক কেজি কাঁচা মরিচ ত্রিশটাকা,এককেজি বেগুন দশটাকা,দেড় কেজি ওজনের একটি ফুল কপি দশ টাকা,তিনচার কেজি ওজনের একটি পাতা কপি দশ পনরো টাকা, এক কেজি গাজর বিশ টাকা,এক কেজি মুলা পাঁচ টাকা এক কেজি আলু ১৫ টাকা একটি মাঝারি লাউ পনরো বিশটাকায় বিক্রি হচ্ছে।এ সকল খুচরা সব্জি বিক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে এ বাজার থেকে এক কিলোমিটার দুরে পাইকারি সব্জি হাট চতুর হাট থেকে তাঁরা কম দামে কিনে এখানে এনে কম দামে বিক্রি করছেন।
বেড়া চতুর বাজার পেঁয়াজ হাটের আরৎদার মুন্নাফ হোসেন বলেন এ হাটে মুড়িকাটা পেঁয়াজ কিনতে ঢাকা সিলেট চিটাগাং খুলনা থেকে ব্যাপারীরা আসেন তাদের চাহিদার ওপর নির্ভর করে কৃষকেরা তাদের দাম পেয়ে থাকেন। এখানে চাহিদার সাথে দাম নির্ভর করে ফলে কৃষকদের দাবি করা মধ্যেস্তাভোগীদের দৌরাত্ম কিংবা সিন্ডিকেটে বাজার দর নির্ধারণ এ গুলো সঠিক নয়।
কাশিনাপুর হাটে পাইকারী পেঁয়াজ কিনে স্তুপ করে রাখা হয়েছে
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত কবীর বলেন, এবার কয়েক দফা বন্যার পর শাক সব্জির বাজার ভালো দেখে কৃষকেরা পেঁয়াজসহ অন্যান্য সব্জি চাষে ঝুকে পড়েছিল। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজ সহ সকল সব্জির বাম্পার উৎপাদন হওয়ায় বাজারে সেগুলোর যোগান বেশি হয়েছে।ফলে কৃষকেরা ব্যাপক লোকসানের মধ্যে রয়েছে। সে কারণে গ্রামীন কৃষি অর্থনীতিতে এর কিছুটা প্রভাব পরবে এটাই স্বাভাবিক। তবে কৃষকদের এ সকল কৃষিপণ্য চাষের পুর্বে কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাঠ কর্মীদের সাথে পরামর্শ নেয়া উচিত এ ছাড়া ঐ সকল চাষের সাথে সাথী ফসল হিসেবে আরেকটি ফসল চাষ করলে লোকসানের পরিমান কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।
২৬/২/২৫