শনিবার, রাত ৮:২৭, ১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শনিবার, রাত ৮:২৭, ১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফিতনা এবং সূফী সাধনা

ড. হাসান রাজা

ফিতনা (বা fitnah, pl. ফিতান ; আরবি: فتنة, فتن‎‎ fitan : “প্রলোভন, বিচার; রাষ্ট্রদ্রোহ, গৃহযুদ্ধ, সংঘাত”) একটি আরবি শব্দ যার বিস্তৃত অর্থ বিচার, কষ্ট বা কষ্ট। গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক অর্থ সহ একটি শব্দ, এটি আধুনিক আরবীতেও ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। কুরআনে ফিতনার অর্থ: পরীক্ষা ও যাচাইকরণ, পথ অবরোধ বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং মানুষকে বিমুখ করা।

ধ্রুপদী আরবীতে ব্যবহৃত ফিতনার অর্থ এবং আধুনিক প্রমিত আরবি এবং বিভিন্ন কথোপকথন উপভাষায় ব্যবহৃত ফিতনা অর্থের মধ্যে পার্থক্য করা যেতে পারে। কুরআনে ফিতনার ধারণাগত গুরুত্বের কারণে, সেই কাজে এর ব্যবহারকে আলাদাভাবে বিবেচনা করার প্রয়োজন হতে পারে, যদিও ক্লাসিক্যাল আরবি ভাষায় শব্দের সাধারণ আভিধানিক অর্থ।

কুরআনে এর ব্যবহার ছাড়াও, ফিতনা শব্দটি ৭ম থেকে ৯ম শতাব্দী পর্যন্ত ইসলামী খেলাফতের মধ্যে চারটি ভারী গৃহযুদ্ধের জন্য ব্যবহৃত হয়।

নাখলা অভিযান (কোরআনে ফিতনার প্রথম উল্লেখ)

সূফীবাদ হচ্ছে ইসলামের আধ্যাত্মিক-তাপসদের মরমীবাদ। এটি কোন সম্প্রদায় নয়, বরঞ্চ এটিকে ইসলামিক শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করা হয় যা মানুষের স্বীয় অভ্যন্তরীণ পরিশুদ্ধতার সাথে সম্পর্কযুক্ত। আত্মা সম্পর্কিত আলোচনা এর মুখ্য বিষয়। সূফীবাদের মূল বিষয় হল, আপন নফসের সঙ্গে, নিজ প্রাণের সাথে, নিজের জীবাত্মার সাথে, শয়তানের সাথে জিহাদ করে তার থেকে মুক্ত হয়ে এ জড় জগৎ থেকে মুক্তি পাওয়া। মৌলিক গবেষণা? আত্মার পরিশুদ্ধির মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন হল এই মতবাদের মর্মকথা। সূফীবাদে স্রষ্টা ও সৃষ্টির মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ককে আধ্যাত্মিক ধ্যান ও জ্ঞানের মাধ্যামে জানার প্রচেষ্টা করা হয়।আল-গাজ্জালি এর মতে, আল্লাহর ব্যতীত অপর মন্দ সবকিছু থেকে আত্মাকে পবিত্র করে সর্বদা আল্লাহর আরাধনায় নিমজ্জিত থাকা এবং সম্পূর্ণ রূপে আল্লাহুতে নিমগ্ন হওয়ার নামই সূফীবাদ বলে। ‘সাফ’ অর্থ পরিশুদ্ধতা অর্জন তথা তাসাওউফের অর্থ আত্মশুদ্ধির অভ্যাস (লাব্‌সু’স-সুফ) – অতঃপর মরমীতত্ত্বের সাধনায় কারও জীবনকে নিয়োজিত করার কাজকে বলা হয় তাসাওউফ। যিনি নিজেকে এইরূপ সাধনায় সমর্পিত করেন ইসলামের পরিভাষায় তিনি সুফি নামে অভিহিত হন।’ ইসলামি পরিভাষায় সুফিবাদকে তাসাওউফ বলা হয়, যার অর্থ আধ্যাত্মিক তত্ত্বজ্ঞান। তাসাওউফ বা সূফীবাদ বলতে আত্মার পরিশুদ্ধির সাধনাকে বুঝায়। সুফীরা দাবি করে যে, আত্মার পবিত্রতার মাধ্যমে ফানাফিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে অবস্থান করা) এবং ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ (আল্লাহর সঙ্গে স্থায়িভাবে বিলীন হয়ে যাওয়া) লাভ করা যায়। তাসাওউফ দর্শন অনুযায়ী আল্লাহ-প্রাপ্তির সাধনাকে ‘তরিকত’ বলা হয়। বলা হয়, তরিকত সাধনায় মুর্শিদ বা পথপ্রদর্শকের প্রয়োজন। সেই পথ হলো ফানা ফিশ্‌শাইখ, ফানা ফিররাসুল ও ফানাফিল্লাহ। ফানাফিল্লাহ হওয়ার পর বাকাবিল্লাহ লাভ হয়। বাকাবিল্লাহ অর্জিত হলে সূফীদর্শন অনুযায়ী সূফী আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ শক্তিতে শক্তিমান হন। তখন সূফীর অন্তরে সার্বক্ষণিক শান্তি ও আনন্দ বিরাজ করে। সুফীগণের মতে, মুহাম্মাদ স্বয়ং সূফীদর্শনের প্রবর্তক। এর সপক্ষে সূফীগণ মুহাম্মাদ (স) এঁর একটি হাদিস উল্লেখ করেন যা হল, “সাবধান! প্রত্যেক রাজা -বাদশাহর একটি সংরক্ষিত এলাকা আছে। আর আল্লাহর সংরক্ষিত এলাকা হচ্ছে তাঁর হারামকৃত বিষয়াদি। সাবধান! নিশ্চয়ই শরীরের মধ্যে একটি মাংসপিণ্ড আছে; যখন তা ঠিক থাকে তখন সমস্ত শরীর ঠিক থাকে, আর যখন তা নষ্ট হয়ে যায় তখন গোটা দেহ নষ্ট হয়ে যায় -এটা হচ্ছে কলব (হৃৎপিণ্ড)। সার্বক্ষণিক আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে কল্‌বকে কলুষমুক্ত করে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জন এবং যারা তার ভালোবাসা লাভ করেছেন, তাদের তরিকা বা পথ অনুসরণ করে “ফানাফিল্লাহর মাধ্যমে বাকাবিল্লাহ অর্জন করা” সুফিবাদের উদ্দেশ্য।

সূফীবাদের সমর্থক ও বিরোধীদের দ্বারা ইসলামিক সাহিত্যে আরবি শব্দ সুফি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। শাস্ত্রীয় সূফী গ্রন্থসমূহে, যা কুরআন ও সুন্নাহর (ইসলামী নবী মুহাম্মদের আদর্শ শিক্ষা ও অনুশীলন) নির্দিষ্ট শিক্ষা ও অনুশীলনের উপর জোর দিয়েছে, তাসাউফের সংজ্ঞা পাওয়া যায় যেখানে নৈতিক ও আধ্যাত্মিক লক্ষ্য বর্ণিত হয়েছে এবং লক্ষ্য অর্জনের জন্য এটি শিক্ষণ সরঞ্জাম হিসাবে কাজ করে।আরো অনেক শব্দ রয়েছে যেগুলো বিশেষ আধ্যাত্মিক গুণাবলী ও ভূমিকাকে বর্ণনা করে তার পরিবর্তে ব্যবহারিক অর্থে বেশি ব্যবহৃত হয়েছে।

অধুনাকালের কিছু পণ্ডিত সূফীবাদকে অন্য রকমভাবেও সংজ্ঞা দিয়ে থাকেন যেমন “ইসলামী বিশ্বাস ও অনুশীলনের তীব্রতা” এবং “নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক আদর্শ উপলব্ধি প্রক্রিয়া”। আঠারো শতকে ইউরোপীয় ভাষায় সূফীবাদ শব্দটি চালু করেন মূলত প্রাচ্যবিদ পণ্ডিতরা যারা এটিকে ইসলামের নির্জীব একেশ্বরবাদের বিপরীতে একটি বুদ্ধিজীবী মতবাদ ও সাহিত্য ঐতিহ্য হিসেবে বিবেচনা করেন। আধুনিককালের পান্ডুলিপিগুলোতে এই শব্দটি সূফীদের সাথে সম্পর্কিত সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ঘটনাগুলির বিস্তৃত বর্ণনা করার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top