শনিবার, সন্ধ্যা ৬:০৩, ১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শনিবার, সন্ধ্যা ৬:০৩, ১৬ই ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সর্বযুগের সকল ধর্মই ইসলাম

সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী

…সর্বযুগের সকল ধর্মই ইসলাম। শেষ নবীর ইসলাম যেহেতু সার্বজনীন ধর্ম এবং সর্বধর্মের সমন্বয় সেহেতু ইহার বিধানগুলি সকলের জন্য সমভাবে গ্রহণযোগ্য হইবে। বর্তমানে প্রচলিত তথাকথিত ইসলামের প্রেক্ষিতে বিচার করিলে অবশ্য ইহার কোনও অংশই সর্বজনীন প্রমাণিত হইতে পারে না। কারণ ইসলামী রাষ্ট্র কোরানের ভাষার মধ্যেই কেবল প্রচ্ছন্ন রহিয়াছে। এবং তাহা প্রবল বিরোধিতার কারণে কোনও কালেই প্রকাশিত হইবার সুযোগ পায় নাই।
জীবনদর্শন এবং জীবনবিধান এক নয়। কোরান একটি ধর্মবিধান নয়। ইহা মানবজাতির জন্য একমাত্র পরিপূর্ণ জীবনদর্শন। জ্ঞানীগণ ইহার নির্দেশ অনুযায়ী ধর্মবিধান বা জীবনবিধান রচনা করিলে তাহা হইবে একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান। প্রচলিত ইসলাম ধর্ম অপূর্ণাঙ্গ এবং বিকৃত একটি জীবনব্যবস্থারূপে বিভিন্ন পরিস্থিতির চাপে সৃষ্ট হইয়া আসিয়াছে। জীবনদর্শন হইতে জীবনবিধান রচনাকার্যটি ধর্ম নিরপেক্ষ পরম জ্ঞানী ব্যক্তি দ্বারা রচিত না হইলে উহার পরিণতি এইরূপ হইয়াই থাকে। এবং এই অবস্থায় জীবনদর্শন হইতে জীবনবিধান বা ধর্ম বিচ্ছিন্ন হইয়া উহা মুক্তিমুখী না হইয়া মূলতঃ অনুষ্ঠানমুখী হইয়া থাকে।
প্রকৃতপক্ষে মোহাম্মদী ইসলাম একটি ফিৎরাতি (অর্থাৎ প্রাকৃতিক) ধর্ম। অপরপক্ষে কোরান ফিৎরাতি জীবনদর্শন। ইহা ধর্ম নয়। ইহা হইতে মোমিনগণ ধর্মবিধান বা জীবনবিধান রচনা করিয়া জনগণকে মুক্তির দিকে আগাইয়া নিবেন। মোমিন ব্যতীত অন্য কাহারও রচিত ধর্ম মুুক্তির দিশারী হইতে পারে না। রসুলাল্লাহ আঃ বলিয়াছেন:
“আলী যে দিকে মোড় নেয় আল্লাহর দ্বীন সে দিকেই মোড় নেয়”।
‘#ফিৎরাত’ অর্থ ভাঙিয়া যাওয়া বা ধ্বংস। মন এবং দেহের ধ্বংসকেই ফিৎরাত বলে। যেহেতু আল্লাহর সৃজিত প্রকৃতির নিয়মে দেহমনের এই ধ্বংস স্বাভাবিক নিয়মের দ্বারা হইয়াই চলিয়াছে । সেইজন্য যে বিধানের দ্বারা দেহ ও মন সহজে ধ্বংস হইয়া যায় অর্থাৎ পুনরায় উভয়ে সংযোজিত হইয়া পুনর্জন্মে আর আসে না সেই বিধানকে ফিৎরাতি ধর্ম বলে।
আল্লাহ হইলেন ‘ফাতেরিস্ সামাওয়াতে অল্ আর্দ’ অর্থাৎ দেহমনের ধ্বংসকারী। দেহমনের সংমিশ্রণের দ্বারা পুনর্জীবনে না আসিয়া দেহমনের ধ্বংসের মাধ্যমেই মানুষ মুক্তি পাইয়া থাকে। ইসলাম দেহমনের ধ্বংসসাধন বিষয়টি সহজে সম্পন্ন করিয়া এই মুক্তির ব্যবস্থা ত্বরান্বিত করে বলিয়াই ইহাকে ফিৎরাতি ধর্ম বলে।
যে কোনও ধর্মাবলম্বী প্রকৃত ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করিলে (অর্থাৎ আপন রবের নিকট বা সম্যক গুরুর নিকট সঠিক আত্ন সমর্পণের ধর্ম অনুসরণ করিলে) তাহার পুনর্জন্ম হইবে না। এইরূপে বলা যাইতে পারে যে, প্রকৃত ইসলামে পুনর্জন্ম নাই।
যাহারা বলে ইসলামের কিছু মানি এবং কিছু কথা মানি না কোরানমতে তাহারা ধর্মদ্রোহী কাফের। বর্তমান জগতে কোরানে বিশ্বাসকারীগণের অধিকাংশ এই মত পোষণ করিয়া থাকে। তাহারা মনে করে কোরানের কোনও কোনও কথা বাদ দিলেও মুসলমান থাকা যায়। তাহাদের মনের ভাবটি হইল, কোরান মধ্যযুগীয় সুন্দর একটি জীবনব্যবস্থা। এই যুগে তাহা হুবহু প্রয়োগ করিলে অসুবিধার সৃষ্টি হইবে।
উপরে উল্লেখিত সমাজবিধান কোনও সমাজে অনুপস্থিত থাকিলে উহা ইসলামী রাষ্ট্র নহে। এবং ঐ রাষ্ট্রের বিধিনিষেধ পালনকারী জনগণও মুসলিম নহে।
মোট কথা, ইসলামকে বুঝিবার এবং ইসলামী রাষ্ট্র পরিচালনা করিবার জ্ঞান যাহাদের ছিল না এবং কোনও কোনও বিষয়ে জ্ঞান থাকিলেও উহা সমাজে রূপায়িত করার ইচ্ছা যাহাদের ছিল না এমন লোকেরাই মোহাম্মদী দ্বীন দখল করিয়া তার কর্তা সাজিয়া বসিল এবং ক্রমশঃ ধর্মকে উহার মূলভিত্তি হইতে সরাইয়া শুধুমাত্র অনুষ্ঠানে রূপান্তরিত করিয়া রাষ্ট্রকে ধর্ম হইতে আলাদা করিয়া ধর্মের নামে অধর্মের রাষ্ট্র রচনা করিয়া চলিল।
মোমিন ব্যতীত অন্য কেহ ধর্মীয় বিধান দিলে তাহা দ্বারা ইসলামী সমাজ সংগঠন হইতে পারে না। সম্রাট মাবিয়ার রাজত্বকাল হইতে আরম্ভ করিয়া সকল উমাইয়া এবং আব্বাসী সম্রাটগণ যে সকল ধর্মবিধান ইসলামের নামে জারি করিয়াছিল তাহার কোনোটাই মোহাম্মদী ইসলামসম্মত ছিল না। তাহারা অনায়াসে রাজকীয় দানবশক্তির বলে ভ্রান্তিমূলক ধর্ম প্রতিষ্ঠায় নিশ্চিত সফলতা অর্জন করিতে পারিয়াছিল। সম্রাট মাবিয়ার পূর্ব হইতেই বিভ্রান্তির সূচনা হইলেও তখন উহার প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিশ্চিত ছিল না। কারণ তখনও মোমিনের প্রভাব পরোক্ষ হইলেও সমাজ হইতে একেবারে বিলুপ্ত হয় নাই।
(ইসলামের মৌলিক বিধান: সদর উদ্দিন আহমদ চিশতী)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top