বৃহস্পতিবার, দুপুর ১২:৩৩, ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৃহস্পতিবার, দুপুর ১২:৩৩, ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

একজন নারী ,আত্ম-বিশ্লেষণ

সামসুন নাহার

একজন নারী শুধু পরিবারের জন্য নয়, নিজের জন্য হলেও বাঁচতে শিখুন। আপনার ভালোবাসা, শিক্ষা, আর ভালো কাজই আপনাকে চিরস্থায়ী করে রাখবে। শহরের ব্যস্ত রাস্তায় জীবন ছুটে চলেছে নিজস্ব গতিতে। সকালবেলা সূর্যের আলো ধীরে ধীরে জানালার ফাঁক গলে ঘরে ঢুকছে। কিন্তু ঘরটি আজ একেবারে নীরব। রান্নাঘরে হাঁড়িপাতিলের কোনো শব্দ নেই, চায়ের কাপের ধোঁয়া ওঠে না, শাড়ির খসখস আওয়াজও নেই। এই ঘরের মালিক, সায়মা বেগম, আজ আর নেই। যিনি একদিন এই ঘরকে প্রাণ দিতেন, যার হাতে তৈরি খাবারে বাড়িটা সুগন্ধে ভরে যেত, যার গলার সুরেলা ডাক সবাইকে জাগিয়ে তুলত—আজ সেই মানুষটাই নেই। তবে আশপাশের পৃথিবী একটুও বদলায়নি। রাস্তায় সবজি বিক্রেতা হাঁক দিচ্ছে, পাশের বাসার বাচ্চারা দৌড়াদৌড়ি করছে, দোকানের সামনে পুরোনো আড্ডা চলছে আগের মতোই। ঘরের ভেতর এক কোণে পড়ে থাকা তার ব্যবহৃত শাড়িগুলো নীরব সাক্ষী হয়ে আছে। সায়মা বেগমের মৃত্যুতে প্রথম কয়েকদিন সবাই কথা বলল, আবার কেউ চোখের পানিও ফেলল। কিন্তু ধীরে ধীরে জীবন আবার স্বাভাবিক হয়ে গেল। সংসার চলছে, রান্না হচ্ছে, হেঁসেলে নতুন কেউ এসেছে, চায়ের কাপ গরম হচ্ছে আগের মতোই। তার প্রিয় গাছের নিচে আজ অন্য কেউ বসে আছে, তার সাজানো ফুলগুলো ফুটলেও কেউ আর সেভাবে তাকায় না। আমরা ভাবি, আমাদের অনুপস্থিতি পৃথিবীকে শূন্য করে দেবে। বিশেষ করে, একজন নারী সারাজীবন নিজের পরিবার, সন্তান, আর সংসারের জন্য নিঃস্বার্থভাবে নিজেকে বিলিয়ে দেন। তবু, যখন তিনি চলে যান, জীবন থেমে থাকে না। কিন্তু সত্যিই কি তিনি হারিয়ে গেলেন? না, তিনি আছেন। তার শিখিয়ে দেওয়া রেসিপিতে কেউ এখনো খাবার রান্না করে, তার বলা শিক্ষাগুলো কারও মনে পথ দেখায়, তার ভালোবাসার পরশ অন্যদের হৃদয়ে বেঁচে থাকে। নারীরা কখনোই হারিয়ে যান না। তারা নিজেদের অস্তিত্ব দিয়ে ভালোবাসার এমন এক ছাপ রেখে যান, যা তাদের মৃত্যুর পরও অদৃশ্যভাবে টিকে থাকে। পৃথিবী হয়তো থেমে যায় না, কিন্তু তারা থেকে যান গল্পে, আচরণে, স্মৃতিতে—একজন মা, একজন মেয়ে, একজন বোন বা স্ত্রী হয়ে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top