শনিবার, সকাল ১১:৫৪, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শনিবার, সকাল ১১:৫৪, ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

দুষনের প্রভাবে পাবনার সুতিখালি নদী মৃত্যপ্রায়।নদীর বুকে সবুজের সমারোহ

ওয়াহিদুজ্জামান (বেড়া) পাবনাঃ

একসময়ে খর স্রোতা সুতিখালি নদী এখন পানিশূন্য মৃত প্রায়। নদীর বিস্তৃীর্ণ এলাকাজুড়ে এখন সবুজের সমারোহ। বিলুপ্ত হয়ে গছে দেশি প্রজাতির নানা মাছ। প্রভাব পড়েছে নৌ যোগাযোগহ জীব বৈচিত্র্যে।  দখল দুষনকেই  দায়ী করছেন সাধারণ মানুষ ও পরিবেশবাদীরা। সুতিখালি নদীর উৎপত্তিস্থল পাবনা জেলার সাঁথিয়া উপজেলার সোনাতলাগ্রামের ইছামতি নদী থেকে।নদীটি দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পশ্চিম দিকে সাঁথিয়া ও ফরিদপুর উপজেলার প্রায় ৯০ কিলোমিটার অতিক্রম করে  চলনবিলের সাথে ও পুর্বদিকের ৫ কিলোমিটারের মত অতিক্রম করে  বেড়া উপজেলার অধিননগর হয়ে হুড়াসাগর নদের সাথে মিলিত হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, একসময়ে এ খরস্রোতা সুতিখালি নদীতে প্রচুর দেশী মাছ উৎপাদন হতো।নদীর  পুর্বদিকের অংশ হুড়াসাগর নদের সাথে যুক্ত থাকায় বর্ষা মৌসুমে অভয়ারণ্য হিসেবে প্রচুর দেশীমাছ প্রবেশ করতো এই নদীতে। সরাবছরই নদীতে পানি থাকায় নদীটিকে জেলার মানুষ মৎস উৎপাদনের স্বর্ণক্ষেত্র হিসেবেই দেখতো । বোয়াল, শোল,পুঁটি,টাকি,টেংরা বাইন,চাপলা,পাবদাসহ প্রায় দেশী মাছ পাওয়া যেত এ নদীতে । তবে সেগুলো এখন এই জনপদের মানুষ ভুলে যেতে বসেছে।পুর্ব  দিকের  মিলিত অংশ হুরাসাগর নদের সাথে মিলিত স্থানে  পাবনা সেচ প্রকল্পের বন্যা নিয়ন্ত্রণ  বাঁধ দিয়ে বন্ধ করায় অভয়াশ্রম হিসেবে আশ্রয় নেয়া দেশি মাছ প্রজনন উৎপাদন একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে। বেড়া মনজুর কাদের মহিলা ডিগ্রি কলেজের ভুগোল বিভাগের  সহকারী অধ্যাপক আবুল কালাম আযাদ বলেন,পাবনা জেলার মধ্যেদিয়ে প্রবাহিত সুতিখালি,  ইছামতি,আত্রাই, কাগেশ্বরিসহ বেশ কয়েকটি নদীর মুখে বাঁধ দিয়ে নিজ হাতে মেরে ফেলা হয়েছে। দ্বিগুণ তিন গুন ফসল উৎপাদনের স্বপ্ন দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে পাবনা পল্লী উন্নয়ন সেচ প্রকল্পের জন্য সুতিখালি, কাগেস্বরি, আত্রাই সহ বেশ কয়েকটি নদীর মুখে বাঁধ দেয়ায় নদী গুলো মজে গিয়েছে। তবে সেচ প্রকল্প কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছাতে পারছে না।অথচ এসকল নদীর মুখ খোলা থাকলে  দেশী মাছের অবাধ বিচরণ থাকতো।রক্ষা পেত জীব বৈচিত্র্য। সাঁথিয়া উপজেলা মৎস অফিস ও বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের দ্বায়িত্ব শীল ব্যক্তিরা স্বীকার করে বলেন। এক সময় নদীর দু’পাড়ের চাষিরা নদী থেকে জমিতে সেচ দিয়ে ফসল ফলাতো। নদী শুকিয়ে যাওয়ায় শ্যালোইঞ্জিন বসিয়ে সেচকাজে ভূর্গভের পানি ব্যবহার করা হচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে গেছে। এতে ফসল উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেছে। বর্তমানে সুতিখালী নদীর আংশিক পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের পানি নিস্কাশন খাল হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। পানির অভাবে বিপন্ন সুতিখালি নদী বর্ষাকাল ছাড়া বাকি মওসুমে থাকে পানিশুন্য। এতে জীববৈচিত্র্য, মৎস্য, কৃষি অর্থনীতি, নৌ-যোগাযোগ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। এদিকে ফরিদপুর, ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর অংশের সুতিখালি নদী মজে যাওয়ায় পুরোটাই দখল হয়ে গেছে। দখল হওয়া এ জমির বুক চিরে সবুজের সমারোহ বিরাজ করছে। শুষ্ক মৌসুমে স্থানীয়রা  ধান চাষ করে ফসল উৎপাদন করে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছে। বেড়া মাছ বাজারে ৩৫ বছর ধরে মাছের ব্যবসা করা শুকান্ত হালদার বলেন,সুতিখালি নদীর মাছ এখন পাওয়া যায় না । অত্যান্ত সু স্বাদু হওয়ায় একসময় এ নদীর মাছের ব্যাপক চাহিদা ছিল। তবে দখল-দূষণ আয়তন কমে  যাওয়ায় দেশি মাছের প্রজনন কমে গেছে।

এছাড়া বর্ষা মওসুমে কারেন্ট জালে অবাধে মা মাছ ও পোনা মাছ শিকার করায় মাছে বংশ বিস্তার মারাত্বকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, সুতিখালি নদী আংশিক এখন পাবনা সেচ ও পল্লী উন্নয়ন প্রকল্পের পানি নিস্কাশন খাল হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। দখল-দূষণসহ নানা কারণে এ নদী এখন সংকুচিত, ভরাট ও পানিশুন্য হয়ে পড়েছে।

ছবিসহ- তারিখ-৮/৩/২৫ ওয়াহিদুজ্জামান

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top