বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩:০০, ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩:০০, ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রগতিশীলতা বনাম আয়নাবাজি

কাকন রেজা

নিজস্ব সংস্কৃতি কী তা বুঝতে হবে। আমাদের কেউ কেউ হাজার বছরের সংস্কৃতি বলতে অজ্ঞান হয়ে যান। মঙ্গলশোভাযাত্রায় বাধা এলে খিঁচুনি উঠে যায়। কিন্তু যখন নারীদের প্রকাশ্যে সিগারেট পানের ব্যাপারে নিষেধের কথা ওঠে তখন তারা আবার হাজার বছরের সংস্কৃতির পাছায় লাথি মারেন। তারা নারীর অধিকারের প্রশ্নে ধনুকের ছিলার মতন টানটান হয়ে ওঠেন। হয়ে ওঠেন পাশ্চাত্যের অনুগামী। ভুলে যান নিজস্ব সংস্কৃতির কচকচানি। ভুলে যান পহেলা বৈশাখের লালপেড়ে সাদা শাড়ি আর লাল টিপের কথা। তাদের প্রশ্ন করি, বিদেশে বাপ-ছেলে একসাথে মদ্যপান করে, সেটা তাদের সামাজিক সংস্কৃতি। আমাদের সামাজিক সংস্কৃতি এবং যা হাজার বছর ধরে প্রচলিত, সেটা তার উল্টো। নয় কি? আমাদের সামাজিক সংস্কৃতিতে মদ্যপানই গর্হিত। মাতাল ভব’র যে কারণে বিরোধীতা করেছি আমি। সে মদ্যপানকে প্রমোট করেছে। এসব হলো ধান্ধাবাজি, প্রগতিশীলতার আয়নাবাজিও বলতে পারেন। আমাদের সমাজে নারীরা প্রকাশ্যে ধূমপান করে না, এটা আমাদের সামাজিক সংস্কৃতি। এর বাইরে গেলে সেই সংস্কৃতির খেলাপ। এই সংস্কৃতিকে বুঝতে হবে। আমাদের সমাজে বিকিনি পরে রোদ পোহানোর দৃশ্য অসভ্যতা। সুতরাং সভ্যতা আর অসভ্যতার প্রশ্নও নির্ভর করে নিজস্ব সংস্কৃতির উপর। যেমন, আফ্রিকায় কোনো উপজাতির মেয়েরা ঊর্ধাংশে কিছু পরিধান করে না। তাদের খোলা বুক তাদের সংস্কৃতি। আমাদের সংস্কৃতি ভিন্ন। ন্যুডানিজম যে সংস্কৃতি ধারণ করে আমরা তার উল্টো। সুতরাং প্রগতির নামে নিজস্ব সংস্কৃতির বাইরে যাওয়াকে নিজের পায়ে কুড়োল মারার সমান হিসেবে ধরা যায়। অবশ্য আমাদের কিছু মানুষ কুড়োল মারার বদলে কুড়োলে পা দিয়ে বসে আছে। তারা হয়তো জানেও না তাদের সোকল্ড প্রগতিশীলতা মূলত অসম্ভব রকম প্রতিক্রিয়াশীলতারই নামান্তর। যে প্রতিক্রিয়াশীলতা আমাদের নিজস্বতাকে বিসর্জন দেয়। মাঝে-মধ্যে আমি শহুরে কথিত প্রগতিশীলদের নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যাই। মনে হয় শহুরে সেসব প্রগতিশীলদের চেয়ে অনগ্রসর গ্রামীণ সমাজের মানুষেরাই বোধহয় বেশি অগ্রসরমান, প্রগতিশীল। কেন, বলছি। গ্রামের ঝগড়ার চিত্র যদি দেখেন, দেখবেন, পুরুষ-নারী সমানে-সমান। বরং গালিগালাজের ক্ষেত্রে মেয়েরা বেশি অগ্রসরমান। এসব ঝগড়া অনেক সময় হাতাহাতির পর্যায়ে পৌঁছে। কিন্তু সেই ঝগড়াকে অনগ্রসর বলে কথিত গ্রামীণ মানুষেরা নারী-পুরুষে বিভাজিত করেন না। যা করে শহুরে ধান্ধাবাজরা। গ্রামে ‘লেডিস ফার্স্ট’ বলে কোনো কথা নেই। তারা নারী-পুরুষ মিলে একসাথে ক্ষেতে কাজ করে। ইট ভাঙে। সেখানে ‘লেডিস ফার্স্ট’ এর নামে কোনো কোটারি চালু নেই। নেই শহুরে ভণ্ডামি। সুতরাং গ্রাম না শহর, শহুরেরা না গ্রামীণ মানুষ বেশি প্রগতিশীল, অগ্রসরমান- এমন দ্বিধায় পড়া স্বাভাবিক। এবং সঙ্গতই পড়ি।

লেখক-সিনিয়র সাংবাদিক, কবি, কলামিস্ট

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top