জাকিয়া শিশির
কিছু মানুষ আমার সংগঠন সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন বিধায় এই লেখা৷ রাষ্ট্রচিন্তা তথা রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের বীজটা উপ্ত ছিল ‘বাংলাদেশের সংবিধান পর্যালোচনা’র প্রয়াসে। যার শুরু ২০১০ সালের গোড়ার দিকে। সেখানেএডভোকেট হাসনাত কাইয়ুমের উদ্যোগে ঢাকার শাহবাগে, দুই আড়াই বছর ধরে ১৯৭২ সালের মূল সংবিধান পর্যালোচনা করা হয়। এই আলাপে আরও অনেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত ছিলেন প্রফেসর ড: হারুন রশীদ, লেখক গবেষক আলতাফ পারভেজ, সাংবাদিক সেলিম খান প্রমুখ।
২০১৩ সালের সূচনায় সংবিধান পর্যালোচনা পুস্তিকাটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটলে, বেশ সময় ধরে হাসনাত কাইয়ূম ও কতিপয় বন্ধু বিভিন্ন ব্যক্তি, দল ও গ্রুপের সঙ্গে সংবিধান ও আইনকানুন নিয়ে অব্যাহত আলাপ-আলোচনা, মতবিনিময় চালাতে থাকেন। এরই ফসল ছিল রাষ্ট্রনৈতিক চিন্তার প্ল্যাটফর্ম ‘রাষ্ট্রচিন্তা’। এরপর সময়ের পরিক্রমায় আর রাজনৈতিক বাস্তবতার তাগিদে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। যদিও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষজনের কাছে রাষ্ট্র সংস্কারের রাজনীতি ও প্রচারের কাজটা গত কয়েক বছর রাষ্ট্রচিন্তার ব্যানার থেকে হয়েছে। নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রচিন্তা ‘উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের ব্যানারে রাস্তায় অনেকগুলো কর্মসূচি পালন করেছে। কোন কোন প্রোগ্রামে জলকামান ও সাঁজোয়া যানসহ পলাতক স্বৈরাচার হাসিনার পুলিশ হামলে পড়েছে, গ্রেফতারের চেষ্টা করেছে। আর ২০২১ সাল থেকে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন সরাসরি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সংস্কারের রাজনীতিকে দেশজুড়ে একটা গ্রহণীয় জায়গায় পৌঁছে দিতে পেরেছে বলে মনে করি। আজকের ডানে-বামের সংস্কারের রাজনীতির সূতিকাগার নিঃসন্দেহে রাষ্ট্রচিন্তা তথা রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। যে সংস্কারের আন্দোলনই আজকের রাজনীতি; জনগণের আজকের রাজনীতি। আমার সংগঠনের পরিচয় আজকাল অনেকেই জানতে চাচ্ছেন ইনবক্সে। একটি তেমন বড় নয় তবে শক্তিশালী সংগঠনের সাথে আমি জড়িত অনেকেই অবগত আছেন। আমি বলে থাকি এটি বাংলাদেশের মোস্ট পাওয়ারফুল আবার আন্ডাররেটেড সংগঠন। নাম হচ্ছে রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলন।
রাষ্ট্রচিন্তা নামক একটি বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তিক তাত্ত্বিক জায়গা নিয়ে কাজ করে আজ বহুবছর। বলা যায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক সবচেয়ে বড়ো থিংকট্যাংক হিসেবেই । প্রান্তিক জনগণ না চিনলেও দেশের সকল রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবী, তাত্ত্বিকরা চেনেন বলে ই আমার বিশ্বাস। রাষ্ট্রচিন্তা থেকে উৎপত্তি হয়ে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে কাজ করে রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলন।
যেই সংস্কার শব্দটা আজ সবার মুখে সেই রাষ্ট্র সংস্কার, আইন সংস্কার, সংবিধান সংস্কার এর ন্যারেটিভের প্রবক্তা রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক এড. হাসনাত কায়ুম। যেই সময় মানুষ সংবিধানের বিরোধিতা বলতে বেদবাক্য কে অস্বীকার বুঝতো। কল্পনাও করতে পারতো না আইনের সংস্কার চাওয়া যায় সেই সময় বসে এই ন্যারেটিভ তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া আমাদের আরো কিছু ন্যারেটিভ হলো শাপলা ভার্সেস শাহবাগ, প্রগতিশীল ভার্সেস প্রতিক্রিয়াশীল ইত্যাদি বাইনারী করে, মানুষকে পরস্পরের শত্রু ও বধযোগ্য প্রাণ হিসেবে গড়ে তোলার যে ঘৃণ্য রাজনৈতিক চাল শাসকরা খেলে এসেছে, তা ভেংগে ভিন্নমত সহ ই দেশের সকল মানুষকে এক কাতারে দাঁড় করানো ও পরস্পরের বিপদে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করা, ইনফ্যাক্ট সংস্কার না নির্বাচন দ্বন্দ্ব নিরসন করে গণপরিষদ নির্বাচন। ইত্যাদি রাজনৈতিক ভাষা ও ভবিষ্যত রাজনীতি নির্মাণের কাজ করেছে রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলন।
ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে গুম ও এরেস্ট হয়ে কারানির্যাতন ভোগকারীদের মধ্যে অন্যতম মানুষ হলেন দিদারুল ভুঁইয়া সহ আরো অনেকে। দিদারুল ভুঁইয়া হলেন রাষ্ট্রসংস্কার আন্দোলনের অন্যতম নেতা। এদের কথা বলার কারণ হলো এই মানুষগুলো সব সময় আড়ালে থেকে নিভৃতে কাজ করে গেছেন সংসার ব্যবসা চাকরি সব চাংগে তুলে। অথচ অভ্যুত্থান পরবর্তী তাদের কোনো কাজকে সামনে এনে সিম্প্যাথি নেওয়া বা বিন্দুমাত্র কোনো সুবিধা নেওয়া বা ফলাও করে প্রচার করতে দেখিনি কাউকে।
এসব বলবার কারণ হচ্ছে গত কয়েকদিন ধরে আমি কোন সংগঠনে আছি ইত্যাদি প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছি। ইনফ্যাক্ট আমার সংগঠনটা আছে কি নাই সেসব প্রশ্নও শুনছি। আমার সংগঠন নাই হবার কারন নাই। রাষ্ট্রসংস্কার কখনোই মাসেল পাওয়ারের রাজনীতি করেনাই বা সস্তা জনপ্রিয়তা পেতে গৎবাদা একগাদা মানুষের দল হয়ে উঠতে চায় নাই। তার কাজ ই ছিলো ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ন্যারেটিভ তৈরি, রাজনীতিতে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে এবং সক্রিয়ভাবে মাঠে অবদান রাখা। সে সফলতার সাথে তা আগেও করেছে, এখনো করছে এবং করে যাবেও ভবিষ্যতে।
এবং তড়িঘড়ি করে টাকা ও ক্ষমতার ব্যবহারে মিনিমাম পলিটিক্যাল জ্ঞান ছাড়া আংগুল ফুলে কলাগাছ না হয়ে জনগণের দল হয়ে উঠেই কাজ করার আকাঙ্ক্ষা রাখে।
জাকিয়া শিশির সদস্য, জাতীয় সমন্বয় কমিটি, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন ৷ সমন্বয়ক, হাওর অঞ্চলবাসী, প্রশিক্ষক ও গবেষক, উপদেষ্টা বকুলতলা ফাউন্ডেশন, সদস্য ডি বি এম