রম্য
- কেকা অধিকারী.
আমার একটা মোটু দিদি আছেন যিনি আমাকে সব সময় বলেন, ‘কেকার সব বিষয়েই নিজের একটা না একটা গল্প আছে।’ হ্যাঁ, সত্যিই আমার সব বিষয়ে গল্প থাকে। এখনও আছে। ওহ, তার আগে বলে নেই- আমার হাজবেন্ড আমাকে নাম দিয়েছেন, ‘সুপার গ্লু লেডি।’ সব তাতেই আমার সুপার গ্লু দিয়ে কাজ করতে ভালো লাগতো। অবশ্য এখন আর লাগে না। কেন লাগে না সে ঘটনাই তো বলবো এখন।
….সে অনেক অনেক বছর আগের কথা । এক যুগেরও অনেক বেশি তো হবেই….একদিন সকালে অফিসে যাওয়ার জন্যে রেডি হচ্ছি। ম্যাচ kore একটা পাথরের কানের দুল পড়বো। দেখি তার একটা ছোট পাথর পড়ে গেছে। ভাবলাম চট করে সুপার গ্লু দিয়ে লাগিয়ে নেই না কেন পাথরটা! যেমন ভাবা তেমন কাজ। গ্লু দিয়ে লাগালাম সে পাথর। এরপর দেখি, ওহ , প্রভু! আমার ৩টি আঙুল- তর্জনী, মধ্যমা ও বৃদ্ধাঙ্গুল এক হয়ে গেছে।….কি যে অসস্ত্বি শুরু হলো । আঙ্গুল তো কিছুতেই ছোটে না। পাগল পাগল লাগা শুরু হলো। কলের নিচে ধরলাম। টানাটানি করলাম। ছুটোছুটি করলাম। চিল্লাচিল্লিও যে সাথে ছিল তা বলাই বাহুল্য। ওদিকে অফিসে দেরি হয়ে যাচ্ছে….কী যে করি? কী যে করি? এক সময় শরীর খারাপ লাগা শুরু হলো। আমার স্বামীও ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন। কিন্তু তার তো অফিসে দেরি হয়ে যাবে। তিনি –‘আহা – আহা ..উহু, উহু..কী করবে এখন?’..ইত্যাদি বলতে বলতে অফিসের উদ্দেশ্যে ঘর ছাড়লেন। আমি ঘেমে নেয় একাকার হতে হতে নিজেকে বললাম ‘উত্তেজিত, ভীত, হওয়া চলবে না, মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করতে হবে’। …করলামও তাই। ….আঙুল ৩টা টেনে একটার থেকে একটা দুরে সরিয়ে নিলাম। বাম হাতে নিলাম একটা সেফটিপিন। ধীরে ধীরে পিনের মাথা দিয়ে জোড়া জায়গায় একটু একটু করে ফুটা করতে করতে এগোতে লাগলাম।এক সময় আঙুলগুলি আলাদা হলো। ততোক্ষণে আঙ্গুলের মাথার চামড়ায় অনেকগুলি ফুটা হয়ে গেছে। রক্তও বের হচ্ছে অল্প অল্প। বেশ ব্যাথা শুরু হলো।…তবুও আঙুলগুলি যে আলাদা করতে পেরেছি তার আনন্দ বলে বোঝানো যাবে না।
আজ এতোদিন পরেও তা অনুভব করতে পারি।… অবশ্য এখনের দিন হলে আমি কিন্তু সোজা অনলাইনে গিয়ে খোঁজ খবর শুরু করে দিতাম। নিশ্চয় আঙুল ছোটানোর কিছু না কিছু সহজ উপায় পেয়েই যেতাম। এমন সমস্যায় কোন বিশেষজ্ঞ পড়েন নি কখনো, তা কি হয়?