মঙ্গলবার, দুপুর ২:২৮, ২রা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মঙ্গলবার, দুপুর ২:২৮, ২রা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ঈদের আনন্দ ও সামাজিক প্রভাব

ছোট্ট আরিফ ঈদের চাঁদ দেখার জন্য ছাদে উঠেছিল। চোখে একরাশ উচ্ছ্বাস, ঈদের নতুন জামা পরার অপেক্ষায় সে ছিল অধির। কিন্তু পাশের বাড়ির রফিক কাকার ছেলেটা, জামিল ছিল মনমরা। তার বাবা দীর্ঘদিন বেকার, নতুন জামা তো দূরের কথা, ঈদের খাবার জোটানোই ছিল কষ্টকর। এই দৃশ্য দেখে আরিফের খুব মন খারাপ হয়। সে তার বাবার কাছে ছুটে যায়। বাবার সহযোগিতায় জামিলের জন্যও নতুন পোশাক আর মিষ্টির আয়োজন করে। ঈদের দিন দুজনের মুখেই ছিল একই হাসি—এটাই ঈদের প্রকৃত সৌন্দর্য।

ঈদের আনন্দ ,ঈদ শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সমাজের মানুষকে একত্রিত করার এক অনন্য উপলক্ষ। ঈদের আগের দিন থেকেই উৎসবের আমেজ শুরু হয়। নতুন পোশাক, সুস্বাদু খাবার ও পরিবারের সাথে সময় কাটানো ঈদকে করে তোলে বিশেষ উপলক্ষ।

গ্রামের রহিম একজন দরিদ্র কৃষকের ছেলে। তার পরিবার সারা বছর কষ্ট করে খেয়ে-পরে কোনরকমে বেঁচে থাকে। ঈদের দিনের জন্যে জামাকাপড় কিনবে, এই সামর্থ্য তার পরিবারের নেই। কিন্তু ঈদের দিন রহিমের জন্য নতুন জামা কিনে দেন তার গ্রামের এক দানশীল ব্যক্তি। এদিন সেও অন্য শিশুদের সঙ্গে আনন্দে মেতে ওঠে। সে নিজেকে সমাজের অংশ বলে অনুভব করতে পারে। এটাই হচ্ছে ঈদের তাৎপর্য।

সামাজিক প্রভাব,- ঈদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এর সামাজিক প্রভাব। এটি ধনী-গরিবের ব্যবধান কমিয়ে আনে। যাকাত ও ফিতরা প্রদান করার মাধ্যমে সমাজের দরিদ্র শ্রেণির মানুষও ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারে। অনেক দাতব্য সংস্থা ঈদের আগে দরিদ্র পরিবারের মধ্যে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করে। তারা ঈদের দিনও এতিম শিশুদের জন্য বিশেষ খাবারের আয়োজন করে। এতে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষরাও ঈদের আনন্দের অংশ হতে পারে।

সংহতি ও সহমর্মিতা -ঈদ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, একে অপরের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি। ঈদে এতিম ও অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের সহযোগিতা করার মধ্য দিয়ে ঈদের প্রকৃত সৌন্দর্য ফুটে ওঠে।

মিজান সাহেব, তিনি প্রতিবছর ঈদের দিনে তার বাসার আশেপাশের দরিদ্র শিশুদের জন্য নতুন জামাকাপড় ও মিষ্টির আয়োজন করেন। এতে শিশুরা শুধু খুশিই হয় না, বরং সমাজের প্রতি তাদেরও ভালোবাসা জন্মায়। ঈদ শুধু ব্যক্তিগত আনন্দের বিষয় নয়, এটি সামাজিক বন্ধন দৃঢ় করার মাধ্যম। সবার জন্য ঈদ যেন সমান আনন্দ বয়ে আনে, এটাই আমাদের কাম্য। ঈদের প্রকৃত অর্থ হলো ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও মানবতার বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। গ্রামে কিংবা শহরে লোকজন সবাই মিলে ঈদের দিন একত্রে আনন্দ উদযাপন করে, একে অপরের বাড়িতে যায়, দাওয়াত খায়, এবং একে অপরকে শুভেচ্ছা জানায়। এটি শুধু আনন্দের মুহূর্তই তৈরি করে না, বরং সমগ্র জাতিকে আরও ঘনিষ্ঠ করে তোলে।

সামসুন নাহার

লেখিকা কোয়ান্টাম গ্রাজুয়েট, মানবাধিকার কর্মী, সংস্কৃতি কর্মী ও সংগঠক

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top