মঙ্গলবার, বিকাল ৪:১৩, ২রা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মঙ্গলবার, বিকাল ৪:১৩, ২রা বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

শীর্ষ তিন পোশাকের রপ্তানি হ্রাস পাচ্ছে

চার দশকেরও বেশি সময় ধরে কম দামে তৈরি পোশাক রপ্তানি করে আসছে বাংলাদেশ, এবং এর মধ্যে পাঁচটি প্রধান শ্রেণির পোশাক সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হয়। এই পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ট্রাউজার, টি-শার্ট ও নিট শার্ট, সোয়েটার, শার্ট ও ব্লাউজ এবং অন্তর্বাস। তবে গত দুই অর্থবছর (২০২২-২৩ এবং ২০২৩-২৪) থেকে এসব পণ্যের রপ্তানি উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।

তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সূত্রে জানা গেছে যে, বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রায় ৮১ শতাংশ আসে এই পাঁচ শ্রেণির পোশাক থেকে। তবে রপ্তানিকারকরা বলছেন যে, গত দুই বছর ধরে পুরো শিল্পের রপ্তানি কমেছে, এবং বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হওয়া পোশাকগুলোর রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। এসব পণ্যের ক্রয়াদেশ পেতে এখন রপ্তানিকারকদের তীব্র প্রতিযোগিতা করতে হয়। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় ট্রাউজার, টি-শার্ট এবং সোয়েটারের মতো পোশাকের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমছে, ফলে কিছু প্রতিষ্ঠান ক্রয়াদেশ হারাচ্ছে।

২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রধান গন্তব্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে চাহিদা কমে যায়, যা গত দুই বছরে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিতে প্রভাব ফেলেছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩,৬১৫ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা আগের দুই অর্থবছরের তুলনায় কম।

বিজিএমইএর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশের মোট পোশাক রপ্তানির ৩৩ শতাংশ আসে ট্রাউজার থেকে, কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ট্রাউজারের রপ্তানি ৪ শতাংশ কমে ১,১৯৩ কোটি ডলারে নেমে এসেছে। ২০২০-২১ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ১,১০০ কোটি ডলার, এবং পরবর্তী দুই বছরে তা বৃদ্ধি পেলেও ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আবারও কমেছে।

বাংলাদেশের টি-শার্ট রপ্তানির বিশ্বব্যাপী সুনাম রয়েছে, এবং ২০২৩ সালে মোট ৫১ বিলিয়ন ডলারের টি-শার্ট রপ্তানি হয়। সবচেয়ে বেশি রপ্তানি করে চীন, এবং বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশের টি-শার্ট রপ্তানি ১০০ কোটি ডলার কমে ৭৭৩ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।

সোয়েটার রপ্তানিও কমেছে, যদিও ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫০০ কোটি ডলারের সোয়েটার রপ্তানি হয়েছিল, পরবর্তী দুই বছরেই তা কমে ৪৮২ কোটি ডলারে পৌঁছেছে।

শার্ট ও ব্লাউজের রপ্তানিও ৮ শতাংশ কমে ২৯৩ কোটি ডলারে নেমে এসেছে।

বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, সাধারণভাবে রপ্তানি কমলে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হওয়া পোশাকের রপ্তানি আরো বেশি কমে। তিনি বলেন, টি-শার্ট, ট্রাউজার ও সোয়েটার অত্যন্ত মূল্য সংবেদনশীল পণ্য, এবং ক্রয়াদেশ পেতে রপ্তানিকারকদের কঠিন প্রতিযোগিতা করতে হয়। তিনি আরো বলেন, শ্রমিকের বেতন, গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি এবং নগদ সহায়তা কমে যাওয়ার কারণে অনেক প্রতিষ্ঠান এসব পণ্যের ক্রয়াদেশ নিতে পারছে না।

ফজলুল হক নীতিনির্ধারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, পোশাক শিল্পের এই মূল ভিত্তি টিকিয়ে রাখতে এবং বাড়তি ব্যয় সমন্বয়ের জন্য রপ্তানিকারকদের সময় দেওয়া উচিত।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top